‘৯৯৯’ ফোন করেও ঠেকানো গেল না গরু লুট; রামুতে মিলেছে যুবকের মৃতদেহ

সোয়েব সাঈদ, রামু :

রামুতে সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের গরু লুট ঠেকাতে ফোন করা হয়েছিল ‘৯৯৯’ নম্বরে। ঘটনাস্থল থেকে থানার দূরত্ব এক কিলোমিটার হলেও পুলিশ পৌঁছতে সময় লেগেছে এক ঘন্টা। আর এর মধ্যে মালিক সহ জনতাতে গুলি করে ২ টি গরু লুট করে নিয়ে যায় ডাকাত দল। আর সকালে ঘটনাস্থলের পাশেই মিলেছে এক যুবকের মৃতদেহ।

গরুর মালিক সহ গ্রামবাসির দাবি ডাকাতরা পিটিয়ে হত্যা করেছে এ যুবককে। আর পুলিশ বলছে, গরু ডাকাতি আর মৃতদেহ উদ্ধার ভিন্ন ঘটনা।

বুধবার সকাল ৭ টার দিকে রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের অফিসেরচর চরপাড়া এলাকার এক সবজি ক্ষেতে মীর কাশেম (৩২) নামের এ যুবকের মৃতদেহ দেখে পুলিশকে খবর দেয়। মীর কাশেম ওই এলাকার মৃত নিয়ামত আলীর ছেলে।

অফিসেরচর চরপাড়া এলাকার মোহাম্মদ আলী জানান, মঙ্গলবার দিনগত রাত ৩ টার দিকে সংঘবদ্ধ ডাকাত দল তার গোয়াল ঘরে থাকা ৭টি গরু নিয়ে যায়। তার মেয়ে রাতে দেখতে পান গোয়ালঘর খালি। এসময় বাড়িতে থাকা জামাতা ফারুক সহ পরিবারের সদস্যরা ছুটোছুটি শুরু করে। প্রধান সড়কে গিয়ে দেখতে পান ডাকাত দল ৭টি গরু গাড়িতে তোলার চেষ্টা করছে। এসময় তারা লুট করা গরুগুলো ডাকাতদলের কবল থেকে কেড়ে নেয়ার চেষ্টা চালায়।

এসময় ডাকাতদল ফারুককে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে তা লক্ষভ্রষ্ট হওয়ায় প্রাণে রক্ষা পান ফারুক। ঘটনার পর থেকে তার ভাতিজা মীর কাশেম নিখোঁজ ছিল। সকালে স্থানীয়রা মীর কাসেমের মৃতদেহ পাশর্^বর্তী সবজি ক্ষেতে দেখতে পান। রাতে ডাকাতির সময় মীর কাশেম দেখে ফেলায় ডাকাতরা তাকে শারীরিক নির্যাতন চালায় এবং হত্যার পর হাত-পা-মুখ বেঁধে সেখানে ফেলে যান।

তিনি জানান, মীর কাশেমের মৃতদেহে দু হাত পেছনে, মুখ, চোখ, এবং পা জোড়া বাধা অবস্থায় পাওয়া যায়। সকালে রামু থানার ওসি (তদন্ত) অরূপ কুমার চৌধুরী ঘটনাস্থলে যান। পুলিশ মৃতদেহ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে।

গৃহকর্তার ছেলে তারেক ও মেয়ে শামীমা আকতার জানান, ডাকাতি চলাকালে ৯৯৯ এ কল করে পুলিশের সহায়তা চাইলেও পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে ১ ঘন্টারও বেশী পরে। অথচ থানা থেকে ঘটনাস্থলের দূরত্ব মাত্র এক কিলোমিটার। দেরিতে আসার পরও পুলিশের এক কর্মকর্তা বাড়ির সদস্যদের ৯৯৯ এ কল করায় তাদের বকাঝকা করেন। ওই কর্মকর্তা বলেন- চুরি হলে আমরা কি করবো, ডাকাতি হলে আসতাম। এসময় স্কুল ছাত্রী শামীমাকে উদ্দেশ্য করে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন- তুমি ক্লাস নাইনে পড়, নাইন বানান জানো? তবে ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম তারা জানাতে পারেননি। সকাল ১০ টায় থানায় যোগাযোগ করতে বলেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।

স্থানীয় ইউপি সদস্য জাফর আলম জানান, রাতে গরু ডাকাতির সময় মীর কাশেম দেখে ফেলে। মীর কাশেম মানসিক ভারসাম্যহীন। সে অপরিচিত লোকজন দেখলে চিল্লাচিল্লি করে। তাছাড়া গভীর রাতে হওয়ায় সে হয়তো চিৎকার দিতে চেয়েছিলো। এজন্য ডাকাতরা তাকে মারধর এবং হাত-পা-মুখ বেধে হত্যা করেছে।

মোহাম্মদ আলীর জামাতা ফারুক জানান, গরুগুলো গাড়িতে তোলার সময় দুজন ডাকাত তাকে মারধর শুরু করে এবং তাকেও বেধে রাখার চেষ্টা চালায়। এসময় তিনি একজন ধরে রাখলে আরো ৪ জন ডাকাত এসে তাকে মারধর করে এবং এক পর্যায়ে তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে তিনি প্রাণে রক্ষা পান। পরে বড় সাইজের দুটি গরু নিয়ে ডাকাতদল গাড়িযোগে সটকে পড়ে।

রামু থানার পরির্দশক (ওসি) আনোয়ারুল হোসাইন জানান, যে মারা গেছে সে মানসিক রোগী। গরু ডাকাতি হয়েছে রাতে, আর তার মৃতদেহ পাওয়া গেছে সকালে। দুইটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করছে।

আর ‘৯৯৯’ নম্বরে ফোনের করার সত্যতা স্বীকার করে ওসি জানান, ৯৯৯ এ ফোন পাওয়ার আগেই পুলিশ গরু লুট ঠেকাতে তৎপরতা পুলিশ তৎপরতা শুরু করে। আর পুলিশ কাউকে বকাঝকা করার বিষয়টি সত্য হতে পারে না। কেনানা পুলিশ সদস্যের পোষাকে ক্যামেরা সংযুক্ত ছিল।